সীরাতুন্নাবী (সা.) ::::: মে – ’১২

রাসূলুল্লাহর (সা.)-এর

জন্মসংশ্লিষ্ট ইরহাসাত

আশরাফ বিন রমীয

অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের মতে, ‘আসহাবে ফীল’ যে বছর পবিত্র কা‘বা শরীফ আক্রমণ করেছিল রহমতে আলম নবী করীম (সা.)  সেই বছর রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। পবিত্র কুরআনে আসহাবে ফীলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আসহাবে ফীলের ঘটনাটি ছিল ইরহাসাত বা নবী করীম (সা.)-্এর জন্মগ্রহণ পূর্ব বরকতসমূহের একটি। নবীজী (সা.) যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেন, পরবর্তীকালে  সে ঘর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের অধিকারে এসেছিল। (সীরাতে মুগলতাঈ, ৫ পৃষ্ঠা)

কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, আসহাবে ফীলের ঘটনাটি ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল সংঘটিত হয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয়, নবী করীম (সা.) এর জন্ম হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের ৫৭১ বছর পর হয়েছিল।

হাদীস শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আসাকির (রহ.) পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখেছেন : হযরত আদম (আ.) ও হযরত নূহ (আ.)-এর মধ্যে একহাজার দুইশত বছরের ব্যবধান ছিল। আর হযরত নূহ (আ.) হতে হযরত ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত ১১৪২ বছরের ফারাক ছিল। এমনিভাবে ইবরাহীম (আ.) হতে হযরত মূসা (আ.)  পর্যন্ত  ৫৬৫ বছর, মূসা (আ.) হতে হযরত দাউদ (আ.) পর্যন্ত ৫৬৯ বছর, হযরত দাউদ (আ.) হতে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত ১ হাজার ৩ শত ৫৬ বছর এবং হযরত ঈসা (আ.) হতে আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন (সা.)-এর মাঝে প্রায় ৬ শত বছর অতিবাহিত হয়েছে।

এই হিসেবে হযরত আদম (আ.) হতে আমাদের প্রিয়নবী (সা.) পর্যন্ত সময়ের পার্থক্য হল ৫ হাজার ৪ শত ৩২ বছর। সে হিসেবে হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমনের প্রায় ৬ হাজার বছর পর অর্থাৎ সপ্তম সহ¯্রাব্দে খাতামুল আম্বিয়া মহানবী (সা.)-এর এই পৃথিবীতে শুভাগমন হয়। (তারীখে ইবনে আসাকির, ১ম খণ্ড, ১৯-২০ পৃষ্ঠা)

মোটকথা আসহাবে ফীলের ঘটনার বছর রবিউল আ্উয়াল মাসে রাসূলে আকরাম (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্ম তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল তবে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী ইবনে আসীব (রহ.) প্রমুখ মাশায়িখে কিরাম রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্ম তারিখ ১০ই রবিউল আউয়াল বলেন। আবার কেউ বলেছেন ২  রবিউল আউয়ালকে, অনেকে আবার ৯ রবিউল আউয়াল বলেছেন। আর সর্বসম্মত মত অনুযায়ী নবী করীম (সা.)-এর জন্ম সোমবার হয়েছিল।

 

নবী করীম (সা.)-এর উচ্চ বংশ

নবী কারীম (সা.)-এর পবিত্র সিলসিলায়ে নসব (বংশ পরিক্রমা) সমগ্র পৃথিবীর বংশাবলী হতে অধিক সম্ভ্রান্ত ও উত্তম। এক বর্ণনায় আছে, হযরত জিবরাঈল (আ.) বলেন,  – আমি পৃথিবীর উদয়াচল হতে অস্তাচল পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বনু হাশিম অপেক্ষা উত্তম কোন খান্দান দেখিনি। এটা এমন এক বাস্তব সত্য যে, মক্কার কাফিররা এবং নবীজীর (সা.) জাত শত্রুরাও তা অস্বীকার করতে পারেনি। হযরত আবু সুফিয়ান কাফির থাকাকালে রোম স¤্রাটের নিকট তা স্বীকার করেছিলেন।

(সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া)

 

নবীজীর জন্মলগ্নে প্রকাশিত বরকতসমূহ

সুবহে সাদিকের বিশ্বব্যাপী আলো এবং দিগন্তের রক্তিম ্আভা যেমনিভাবে পৃথিবীকে সূর্যোদয়ের সুসংবাদ দান করে, তেমনিভাবে নবুওয়াত রবি (সা.)-এর ্উদয়কাল যখন ঘনিয়ে এলো, পৃথিবীর দিকে দিকে তখন এমন ঘটনারাজি প্রকাশ পেতে লাগলো, সেগুলো সুস্পষ্টরূপে সরদারে কায়েনাত (সা.)-এর শুভ আগমন সংবাদ বহন করছিল। মুহাদ্দিসীন ও ঐতিহাসিকগণের পরিভাষায় যাকে ইরহাসাত (অপেক্ষামান নিদর্শন) বলে।

নবী করীম (সা.)-এর শ্রদ্ধেয় জননী বিবি আমেনা হতে বর্ণিত আছে, যখন নবীজী (সা.) তার গর্ভে স্থিতি লাভ করেন, তখন স্বপ্নযোগে তাকে সুসংবাদ প্রদান করা হয় যে, আপনার গর্ভে যে সন্তানটি রয়েছে, তিনি এই উম্মতের সরদার হবেন, যখন তিনি ভূমিষ্ট হবেন, তখন আপনি এভাবে দু‘আ করবেন, আমি তাকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করলাম। আর তার নাম রাখবেন মুহাম্মদ। (সীরাতে ইবনে হিশাম)

তিনি আরও বলেন, মুহাম্মদ আমার গর্ভে আগমন করার পর আমি একটি উজ্জ্বল জ্যোতি দেখতে পেলাম। যার আলোকে বসরা নগরী ও সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আমার দৃষ্টিসীমায় চলে আসলো। (সীরাতে ইবনে হিশাম)

তিনি আরও বলেন  – আমি  কোন নারীকে মুহাম্মদ (সা.) অপেক্ষা হা – কা ও কষ্ট-কেশহীন গর্ভধারণ করতে দেখিনি। অর্থাৎ সাধারণত মহিলাদের গর্ভাবস্থায় যে বমি বমি ভাব, অবসাদ অবস্থা ইত্যাদি হয়ে থাকে, তার কিছুই আমার অনুভূত হয়নি।

এ ছাড়াও আরো অনেক ঘটনা নবীজী (সা.)-এর দুনিয়ায় আগমন পূর্ব সময়ে সংঘটিত হয়েছিল।

Related posts

2 Thoughts to “সীরাতুন্নাবী (সা.) ::::: মে – ’১২

  1. Adorsho nari onek valo lage

    Nobijir sunnat onujayi jiboner potiti dhape jate amol korte pari

  2. Mayka

    I rellay needed to find this info, thank God!

Leave a Comment